Mukti Juddho Wiki
Register
Advertisement
File:Shaheed minar Roehl.jpg

শহীদ মিনার

ভাষা আন্দোলন ঃ ২০২২ সালের পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন না। তা মিথ্যা। ১২৩৪ সালে Liberation War had been gone. But Al. Kali Genral pajiur Anil had our god of pakistanpresident . By which we gain Bodar of in India. Then gained Bangladesh.

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরাই পাকিস্তান সরকারে প্রাধান্য পায়। পাকিস্তান সরকার ঠিক করে উর্দু ভাষাকে সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করা হবে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ভাষার চল ছিলো খুবই কম। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন) এই সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবীতে শুরু হয় আন্দোলন।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে। এই ঘোষণার ফলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বে-আইনি ঘোষণা করে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অনেক ছাত্র ও আরো কিছু রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে একটি মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-এর কাছে এলে পুলিস মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন আব্দুস সালাম,রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সারা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ও তীব্র আকার ধারন করে। অবশেষে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় বাংলাউর্দুভাষাকে সম-মর্যাদা দিতে। right|thumb|ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত "মোদের গরব" ভাস্কর্য এই আন্দোলন পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করে দিয়েছিল। এই আন্দোলনের স্মৃতিতে পরবর্তী কালে গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনার, ঠিক সেই জায়গাতে যেখানে প্রাণ হারিয়েছিলেন রফিক, বরকত, জব্বাররা। ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটি বাংলাদেশে শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে।

ভাষা আন্দোলনের সূচনা[]

বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের আগে থেকেই। বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসে "গণ আজাদী লীগ" (পরবর্তীতে সিভিল লিবার্টি লীগ)-এর পক্ষ থেকে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে[1]। তারা তাদের দাবির পক্ষে জোর প্রচারনা চালাতে থাকে। তৎকালীন সময়ে সংবাদপত্রগুলোতে পাকিস্তানে বাংলা ভাষার সম্ভাবনা নিয়ে বুদ্ধিজীবী এবং জনমত প্রকাশ করতে থাকে। তন্মধ্যে ২২শে জুন দৈনিক ইত্তিহাদে প্রকাশিত আবদুল হকের[2] কলাম ছিল প্রথম। ২৯ শে জুলাই মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নিবন্ধটি ছিল বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এই সকল নিবন্ধসমূহের অধিকাংশের বিষয়বস্তু ছিল বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষার মর্যাদা দেয়া প্রসঙ্গে[3]। ১৯৪৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত "পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুব লীগ"-এর একটি সভায় একই দাবি উত্থাপিত হয়.[1]

বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে, নতুন রাজনৈতিক সংগঠন তমুদ্দন মজলিশ একটি বই প্রকাশ করে, যার নাম "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা-বাংলা না উর্দু"। তারা এই বইয়ে বাংলা ও উর্দু উভয়কেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার সুপারিশ করে। তারা ফজলুল হক মুসলিম হলে ১২ই নভেম্বর একটি সভা করে[4]। এই সভার পূর্বে পূর্ব বঙ্গ সাহিত্য সমাজ ৫ই নভেম্বর এই সংক্রান্ত একটি সভা করে।

কিন্তু বিদ্যমান অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে ডিসেম্বর মাসে যখন ৫ই ডিসেম্বর করাচীতেঅনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ও মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন প্রদেশে ব্যবহার এবং প্রাথমিক স্তরের আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়[5]। তাত্ক্ষনিক প্রতিবাদে ৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এসে জড়ো হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম ও দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে নির্ধারন করার দাবি জানানো হয়। ভাষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত প্রথম সভা ছিল সেটি[1]। ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছাত্ররা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রথম রাষ্ট্র

ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে[6]

The real hero of Bangladesh :

যখন পূর্ব বঙ্গে ভাষা আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার দাবির প্রতি ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। শিক্ষা সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী, পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলা ভাষাকে তাদের বিষয় তালিকা হতে বাদ দেয়। স্টাম্প ও মুদ্রায় বাংলা ভাষার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয় যেখানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেও এর প্রচলন ছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তমুদ্দন মজলিস পূর্ব বঙ্গের গণ-পরিষদের মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার এবং নুরুল আমিনকে নিয়ে বৈঠক করে যেন তারা সাধারন পরিষদে এই ব্যপারে অবহিত করেন। এছাড়াও তারা একই উদ্দেশ্যে পূর্ব বঙ্গের মূখ্য মন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে দেখা করেন। কিন্তু এই ব্যাপারে সোচ্চার হন পূর্ব বঙ্গের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণ-পরিষদে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য একটি সংশোধনী আনেন। তার বক্তৃতায় বাংলাকে অধিকাংশ জাতি গোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে ধীরেন্দ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি করেন। এছাড়াও সরকারী কাগজে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। পরিষদের কিছু সদস্য তার এই বক্তব্যের পক্ষে মতামত দিলেও প্রধান মন্ত্রী লিয়াকত আলী খান একে পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। উর্দুকে লক্ষ কোটি মুসলমানের ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবল মাত্র উর্দুই হতে পারে। অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি ভোটে বাতিল গণ্য হয়[7]। সংসদীয় দলের আপত্তির কারনে অনেক বাঙালি মুসলমান সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত সংশোধনীটিকে সমর্থন করতে পারেননি[3]। তমুদ্দন মজলিস পরিষদের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে ১১ই মার্চ ধর্মঘট আহবান করে এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তাঁর পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানায়। ১১ই মার্চের কর্মসূচী নির্ধারনের জন্য ১০ মার্চ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ই মার্চ ভোরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা বের হয়ে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। সকালে ছাত্রদের একটি দল রমনা পোস্ট অফিসে গেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রদের আরও একটি দল রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সচিবালয়ের সামনে পিকেটিং-এ অংশ নিয়ে গ্রেফতার হয়। বিকেলে এর প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হলে পুলিশ সভা ভেঙ্গে দেয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। সভা শেষে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসার দিকে অগ্রসর হলে হাই কোর্ট-এর সামনে তাদের বাধা দেয়া হয়। মিছিলটি তখন দিক পরিবর্তন করে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পুলিস মিছিলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে শেরে-এ-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সহ ছাত্র নেতাদের আহত করে[3]। সারা দেশ জুড়েই ধর্মঘট পালিত হয়। ১৫ই মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত এই অবরোধে বগুড়া, রাজশাহী, যশোর, খুলনা সহ বিভিন্ন জেলার ছাত্র-জনতা অংশ নেয়।

১৫ই মার্চ ছাত্ররা বের হয়ে এসে আবার পিকেটিং শুরু করলে সচিবালয়ের কর্মচারী এবং রেলওয়ে ক্লার্করা তাদের সমর্থন করে। এদিকে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্‌-র সফরের দিন এগিয়ে আসার কারনে খাজা নাজিমুদ্দিন আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার আহবান জানান। তিনি কমরুদ্দিন আহমেদের কাছে দুই জন প্রতিনিধি পাঠান চুক্তির লক্ষ্যে। কমরুদ্দিন দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অন্যান্য নেতাদের সাথে কথা বলেন। এরপর তিনি নাজিমুদ্দিনের কাছে গিয়ে চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে কারাগারে আটক নেতাদের সাথে কথা বলতে চান। এরপর তাদের সম্মতিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র এই ব্যাপারে না জানায় তারা তাদের কর্মসূচী অব্যহত রাখে। যখন ছাত্ররা এই ব্যাপারে জানতে পারে, তখন তারা এটাকে ষড়যন্ত্র মনে করে চক্তির ব্যাপারে খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে সুস্পষ্ট বক্তব্যের দাবি করেন। কিন্তু খাজা নাজিমুদ্দিন এই ব্যাপারে মুখ খোলেননি।

১৯শে মার্চ, ১৯৪৮-এ ঢাকায় এসে পৌছান পাকিস্তানের স্থপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ২১শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে তিনি একটি ভাষণ প্রদান করেন। তার ভাষনে তিনি ভাষা আন্দোলনকে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও তিনি বলেন পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক ভাষা নির্ধারিত হবে প্রদেশের অধিবাসীদের ভাষা অনুযায়ী, কিন্তু দ্ব্যর্থহীন চিত্তে ঘোষনা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোন ভাষা নয়। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন জনগনের মধ্যে যারা ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, তারা কখনোই ক্ষমা পাবে না। জিন্নাহ্‌-র এই মন্তব্যে তাৎক্ষনিকভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে উপস্থিত ছাত্রসহ জনতার একাংশ। উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা- এই বিরূপ উক্তিতে আন্দোলনকারীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে[1]২৪শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়ে তিনি একই ধরনের বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন এই আন্দোলন সংকীর্ন দৃষ্টিভঙ্গীর বহিঃপ্রকাশ এবং অভিযোগ করেন কিছু লোক এর মাধ্যমে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাচ্ছে। যখন তিনি উর্দুর ব্যাপারে তার অবস্থানের পুনরুল্লেখ করেন উপস্থিত ছাত্ররা সমস্বরে না, না বলে চিৎকার করতে থাকে।

একই দিনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে বৈঠক করে, যেখানে তিনি খাজা নাজিমুদ্দিন স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একপেশে এবং চাপের মুখে সম্পাদিত বলে প্রত্যাখান করেন। অনেক তর্ক-বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জিন্নাহ্‌-র নিকট স্মারকলিপি পেশ করে[3]২৮শে মার্চ জিন্নাহ্‌ ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে তার দেয়া বক্তব্যে তার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

জিন্নাহ্‌-র ঢাকা ত্যাগের পর, ছাত্রলীগ এবং তমুদ্দন মজলিসের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তমুদ্দন মজলিসের আহবায়ক শামসুল আলম তার দায়িত্ব মোহাম্মদ তোয়াহার কাছে হস্তান্তর করেন[1]। পরবর্তীতে তমুদ্দন মজলিস আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য কম্যুনিস্টদের দায়ী করে একটি বিবৃতি প্রদান করে এবং পরে তারা আস্তে আস্তে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসে।

১৯৫২: ki 💥.[]

ভাষা আন্দোলনের পুনরায় জোরালো হওয়ার পিছনে ২৭শে জানুয়ারি ১৯৫২ সালের খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাষন প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে[3]। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন খাজা নাজিমুদ্দিন ২৫শে জানুয়ারি ঢাকায় আসেন এবং ২৭শে ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষন দেন। তিনি মূলতঃ জিন্নাহ্‌-র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত তার ভাষনে তিনি আরো উল্লেখ করেন কোন জাতি দুইটি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি।

নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯শে জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্র ও নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সম্বেত হয়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারা তাদের মিছিল নিয়ে বর্ধমান হাউসের (বর্তমান বাংলা একাডেমী) দিকে অগ্রসর হয়[6]

১৯৫২ সালের ৩১শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের 'সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ' গঠিত হয়[8]। সভায় আরবী হরফে বাংলা লেখার সরকারী প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এবং ৩০ শে জানুয়ারির সভায় গৃহীত ধর্মঘটে সমর্থন দেয়া হয়। পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে[3]

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। সমাবেশ থেকে আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবের প্রতিবাদ এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ছাত্ররা তাদের সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে[9]

২০শে ফেব্রুয়ারি সরকার এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঐদিন রাতে বৈঠক করে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এবং পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা[]

সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারন জনগনের মতকে বিবেচনা করার আহবান জানাতে থাকে।

পুলিস অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিকে প্রাচীর তৈরি করে। বিভিন্ন অনুষদের ডীন এবং উপচার্য সে সময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিস কাদাঁনে গ্যাস বর্ষন করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়।

কিছু ছাত্র এই সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌড়ে চলে গেলেও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পুলিস দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিসের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিসকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করতে বলে। কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় পুলিস তাদের গ্রেফতার করা শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনায় ছাত্ররা আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে তাদের কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করে। এই সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কিছু মহিলা তাদের এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে।

বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দেয় এবং সভায় তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানায়।

কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইন সভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবেন। ছাত্ররা সেই উদ্দেশ্যে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিস দৌড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করেCite error: Invalid <ref> tag; invalid names, e.g. too many। পুলিসের গুলিবর্ষণের কিছু ছাত্রকে ছাত্রাবাসের বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন[10]। আবুল বরকত সে সময় আহত হন এবং রাত ৮টায় নিহত হন। গুলিবর্ষণের সাথে সাথে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত ডাক্তার এবং নার্সরা পূর্বে আহত ছাত্রদের বের করে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা করতে থাকেন।

ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগন ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎখনিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহবান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে[11]

২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা[]

সেদিন আইন পরিষদে বিরোধী দলের সদস্যরা বিষয়টি উত্থাপন করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে এবং অধিবেশন মুলতবি ঘোষনার আহবান জানান। ক্ষমতাসীন দলের কিছু সদস্যও এই আহবানের সমর্থন জানান। কিন্তু নুরুল আমিন তাদের আহবানের সাড়া না দিয়ে অধিবেশন অব্যাহত রাখেন এবং হাসপাতালে যেতে অস্বীকৃতি জানান।

File:22 Feb 1952 DURoad.jpg

২২শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে জানাজ শেষে বিশাল মিছিল বের হয়।

ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে সারা দেশ হয়ে উঠে মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল। জনগন ১৪৪ ধারা অমান্য করার পাশাপাশি শোক পালন করতে থাকে[3]। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেয়। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শহরের নাগরিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন। পরে তাদের অংশগ্রহনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিশাল মিছিলে অংশগ্রহন করে। বেলা ১১ টার দিকে ৩০ হাজার লোকের একটি মিছিল কার্জন হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রথমে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে তাদের উপর গুলিবর্ষন করে। এই ঘটনায় সরকারী হিসেবে ৪ জনের মৃত্যু হয়।

শহরের বিভিন্ন অংশে একইভাবে জানাজা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে আর একটি বিশাল মিছিল পুলিশ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা জুবিলী প্রেসে অগ্নিসংযোগ করে[12]। উল্লেখ্য জুবিলী প্রেস থেকে সকালের পত্রিকা বের হয়েছিল।

একই দিনে পুলিশ দ্বারা আক্রমন ও হত্যার বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। নবাবপুর রোডের বিশাল মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষনে ঘটনায় শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে মারা যান। একই রাস্তায় অহিদুল্লাহ নামে নয় বছরের এক বালকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে পুলিশ কিছু লাশ কৌশলে সরিয়ে ফেলে। আজাদের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪ এবং সৈনিকের তথ্যমতে ছিল ৮।

পরবর্তী ঘটনা (১৯৫২)[]

File:22 Feb 1952 DURoad.jpg

February 22 rally after janaja at Dhaka Medical College on the University of Dhaka road, Dhaka.

২৩ ফেব্রুয়ারি সাড়া রাত ঢাকা ম্যাডিকেল কলেজের ছাত্রবৃন্দ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিতে কাজ করেন। যা ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছিল। তাতে একটি হাতে লেখা কাগজ যুক্ত করা হয়েছিল যাতে লেখা ছিল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ[13] Inaugurated bস্মৃতিস্তম্ভডটি উদ্বোদন করেন আন্দোলনে নিহত শফিউর রহমানের পিতা। স্মৃতিস্তম্ভটি পুলিশ ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখে ভেঙে দিয়েছিল।[14] ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে, কলকারখানার শ্রমিকরা নারায়নগঞ্জ শহরে ধর্মঘটের ডাক দেয়।[15] ফেব্রুয়ারি ২৯ তারিখে প্রতিবাদে অংশগ্রহকারীরা ব্যাপক পুলিশী হামলার সিকাড় হন।[16]

২১ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর সরকার আন্দোলনের বিপক্ষে জোর প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে। তারা জনগনকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে যে কম্যুনিস্ট ও পাকিস্তানবিরোধীদের প্ররোচনায় ছাত্ররা পুলিশকে আক্রমন করেছিল। তারা বিভিন্নভাবে তাদের এই প্রচার অব্যাহত রাখে। তারা সারা দেশে লিফলেট বিলি করে। সংবাদপত্রগুলোকে তাদের ইচ্ছামাফিক সংবাদ পরিবেশনে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেCite error: Invalid <ref> tag; invalid names, e.g. too many। পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারন জনগন ও ছাত্র গ্রেফতার অব্যাহত থাকে। ২৫শে ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করার চেষ্টা করলে, উপযুক্ত কাগজের অভাব দেখিয়ে সরকার মামলাটি গ্রহণ করেনি[17]। রফিকউদ্দিন আহমদের পরিবার একই ধরনের একটি প্রচেষ্টা নিলে, একই কারনে তাও বাতিল হয়।৮ই এপ্রিল সরকার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এর রিপোর্টে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের উপর গুলি করার কোন উল্লেখযোগ্য কারন দেখাতে পারেনিCite error: Invalid <ref> tag; invalid names, e.g. too many। সরকারের প্রতিশ্রুত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ প্রত্যাখান করে। ১৪ই এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন সামনে চলে আসে[18]। এই সমস্যা নিরসনের পক্ষে অনেক সদস্য মত প্রকাশ করলেও মুসলিম লীগের সদস্যরা এই ব্যপারে নীরব থাকেন। এই বিষয়ের বিপক্ষে তারা ভোট দিলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা ২১ ও ২২শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন[19]। ২৭শে এপ্রিল বার সেমিনার হলে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ একটি সেমিনার আহবান করে এবং সরকারের কাছে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করে। ১৬ই এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুললে সেদিন ছাত্ররা সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় লীগ কমিটির প্রধান নেতা আবদুল মতিন গ্রেফতার হলে কমিটি আবার পুনর্গঠিত হয়।

চূড়ান্ত পর্যায়(১৯৫৩-৫৬)[]

কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি স্মরণে শহীদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মজিবুর রহমানও দিবসটি পালনে সম্মত হন[20]। ১৮ই ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালনের উদ্দেশ্যে প্রশাসনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভাষা আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ প্রভাত ফেরী-তে যোগ দেন। হাজার হাজার মানুষ কালো ব্যজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আসে এবং মিছিল করে প্রাঙ্গন ত্যাগ করে। সহিংসতা রোধের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। প্রায় লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে আরামানীটোলায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে এক দফা দাবি জানানো হয়, ভাষার দাবির সাথে সাথে মাওলানা ভাসানীসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি করা হয়। রেলওয়ের কর্মচারীরা ছাত্রদের দাবির সাথে একমত হয়ে ধর্মঘট পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের ছাত্ররা শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন[21]। অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ফজলুর রহমান বলেন যে বাংলাকে যারা রাষ্ট্রভাষা করতা চায় তারা দেশদ্রোহী। তার এই বক্তব্যে জনগন হতাশ হয়ে তাঁকে কালোব্যাজ দেখায়। সাধারন মানুষের মাঝে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই লেখা সম্বলিত স্মারক ব্যাজ বিলি করা হয়। ভাষা সংগ্রাম কমিটি দিবসটি পালন উপলক্ষে সমাবেশ আহবান করে। আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ভাষা আন্দলনের মূল অনুপ্রেরনাদায়ী সঙ্গীত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো... সেই বছর কবিতা আকারে লিফলেটে প্রকাশিত হয়।

১৯৫৪ সালকে পূর্ব বঙ্গের রাজনৈতিক ও ভাষা আন্দোলনের ব্যাপক পট পরিবর্তনের বছর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট যেন আন্দোলনের কোন সুযোগ না পায় সে জন্য মুসলীম লীগ তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখেCite error: Invalid <ref> tag; invalid names, e.g. too many এই সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের ছয়টি ভাষাকে একই মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলে সেখানকার প্রতিনিধিত্বকারীরা[22]। আবদুল হক (বাবা উর্দু নামে পরিচিত) এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান এবং তাঁর অবস্থানে অনড় থাকেন। তাঁর নেতৃত্বে ২২শে এপ্রিল করাচীতে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে সহিংস ঘটনায় সিন্ধি ভাষার দৈনিক আল ওয়াহিদ পত্রিকার অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়[23]। অন্যদিকে ২৭শে এপ্রিল বাংলা ও অন্যান্য ভাষাকে সমমর্যাদা দেয়ার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁরা সংখ্যালঘু উর্দুভাষী যারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিল তাদের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে, সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়।

সমাধান[]

File:21feb1956 Shaheed Minar Dhaka.jpg

১৯৫৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের পরিবারের সদস্যরা শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলা একাডেমী গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সফল যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের কিছুদিন পরেই সামরিক আইন জারি হয় এবং ১৯৫৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকার এই প্রকল্প বাতিল করে দেয়। এর আগে ১৯শে ফেব্রুয়ারি সরকার সকল ধরনের নাগরিক অনুষ্ঠানের উপর ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ছাত্র ও সাধারন জনগন ২১ তারিখ রাতের বেলা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সমবেত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে শোকের কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়[24]। পুলিস ক্যাম্পাসে সমবেত জনতা ও ছাত্রদের উপর আক্রমন করে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হলে সেখানে পূর্বে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত ভাষা আন্দোলনকারীদের সাথে তাদের দেখা হয়। গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা জামিন নিতে অস্বীকার করে এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি জানায়। পরে তাদের মুক্তি দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছেড়ে দিতে শুরু করে। এরই মধ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। সেদিন প্রথম শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পাকিস্তানের গণপরিষদে পাচ মিনিট বন্ধ রাখা হয় ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে। সারাদেশব্যপী পালিত হয় শহীদ দিবস এবং বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। আরমানীটোলায় এক বিশাল সমাবেশের নেতৃত্ব দেন মাওলানা ভাসানীCite error: Invalid <ref> tag; invalid names, e.g. too many[25]

ভাষা আন্দোলন শুরুর প্রায় দশ বছর পর বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৫৬ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি। সংবিধানের ২১৪ অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়:

214.(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali

অর্থাৎ উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ব্রিটিশ আমল থেকেই দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে ইংরেজীর প্রচলন ছিল। ১৯৬২ সালের ১লা মার্চ আইয়ূব খান পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে (The Consititution of the Republic of Pakistan) বাংলাকে জাতীয় ভাষা হিসাবে উল্লেখ করা হয়:

The national languages of Pakistan are Bengali and Urdu

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়:

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা (The state language of the republic is Bangla)


তথ্যসূত্র[]

  1. 1.0 1.1 1.2 1.3 1.4 বদরউদ্দিন ওমর। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, ১ম ভাগ, ১৯৭৯
  2. আবদুল হক. ভাষা আন্দোলনের আদিপর্ব, ১ম প্রকাশ, ১৯৭৬।
  3. 3.0 3.1 3.2 3.3 3.4 3.5 3.6 বশীর আল হেলাল। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, আগামী প্রকাশনী। ২০০৩। ISBN 984-401-523-5
  4. "দৈনিক আজাদ, ১৩ই নভেম্বর, ১৯৪৭"
  5. দৈনিক আজাদ, ডিসেম্বর, ১৯৪৮
  6. 6.0 6.1 "একুশের সংকলন'৮০ স্মৃতিচারণ, পৃ ১০২-০৩"
  7. "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র. পৃ-৫৪-৬৫
  8. দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৫২
  9. দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ৫, ১৯৫২
  10. ইতিহাস, কবির উদ্দিন আহমেদ. পৃ-২২৫-২৬
  11. দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ২২, ১৯৫২
  12. দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ১৯৫২
  13. Template:Citation
  14. Template:Citation
  15. Template:Citation
  16. Template:Harv
  17. দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৫২
  18. দৈনিক আজাদ, মার্চ ২০, ১৯৫২
  19. দৈনিক আজাদ, এপ্রিল ১১, ১৯৫২
  20. সাপ্তাহিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারি ৮, ১৯৫৩
  21. সাপ্তাহিক ইত্তেফাক, ১৯৫৩
  22. দৈনিক আজাদ, এপ্রিল ২১, ১৯৫৪
  23. দৈনিক আজাদ, এপ্রিল ২২, ১৯৫৪
  24. একুশের সংকলন, ১৯৫৬
  25. সাপ্তাহিক নতুন খবর, ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৫৬
Advertisement