Mukti Juddho Wiki
Register
Advertisement

কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমেদ (জন্ম: অজানা) বীর বিক্রম বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী। ১৯৭১ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেন। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার তিনি অন্যতম স্বাক্ষী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[]

অলি আহমেদের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশে। তাঁর বাবার নাম আমানত ছাফা এবং মায়ের নাম বদরুননেছা। তাঁর স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে, দুই ছেলে।

কর্মজীবন[]

১৯৭১ সালে অলি আহমদ কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে অবসর নেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[]

প্রতিরোধযুদ্ধকালে অলি আহমদের নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে। ২০ এপ্রিল মিরসরাইয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে দুই ভাগে ছিলেন এবং সামনে ও পেছনে ছিল তাঁদের প্রতিরক্ষা। অলি আহমদ তাঁর সেনা চাকরির অভিজ্ঞতা জানতেন, পাকিস্তান সেনারা সাধারণত আক্রমণ করে ভোরে। সূর্য ওঠার আগে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, সেই সুযোগে। এ জন্য তিনি সহযোদ্ধাদের ভোর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত বিশেষভাবে সজাগ ও যুদ্ধাবস্থায় রাখতেন। প্রতিদিন তিনি খুব ভোরে উঠে প্রতিরক্ষা তদারক করতেন। ২০ এপ্রিল সূর্য ওঠার আগে উঠে সহযোদ্ধা ফয়েজ আহমদকে নিয়ে প্রতিরক্ষা তদারক করছিলেন। সেখানে প্রতিরক্ষায় ছিলেন দুজন মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু তখন তাঁরা ছিলেন না। এটি ছিল এ মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রতিরক্ষার সবচেয়ে সামনের অবস্থান। কাউকে না পেয়ে তিনি শঙ্কিত এবং সম্ভাব্য এক বিপদের গন্ধ পান। সবাইকে সতর্ক করে সব সহযোদ্ধাকে স্ট্যাড টু পজিশনে পুনর্বিন্যাস করেন। এই পজিশনকে সামরিক ভাষায় বলা হয় যুদ্ধাবস্থা। সম্ভাব্য যুদ্ধের সব ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করে অলি আহমদ পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যান। আর তখনই তিনি দেখতে পান, ফাঁকা রাস্তায় সীতাকুণ্ড থেকে তীব্র বেগে ছুটে আসছে একটি জিপ। নিমেষে সেটি ফরোয়ার্ড পোস্ট পজিশনে এসে সজোরে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ে। অবাক অলি আহমদ দেখেন, জিপ থেকে লাফিয়ে নামছে ওই পজিশনে নিয়োজিত তাঁর দলের সেই দুই সহযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম এবং অন্য একজন। তাঁরা দুজন অলিকে জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁদের দেখে ফেলেছে। ধাওয়া করে আসছে। এর দুই মিনিটের মধ্যেই অলি ফাঁকা রাস্তায় দেখতে পান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি জিপ ও ট্রাকবহর আসছে এবং দুই শ গজ দূরে থেমে শুরু করে ব্যাপক গোলাগুলি। এই আশঙ্কাতেই ছিলেন অলি আহমদ। এ জন্য সহযোদ্ধাদের তিনি আগেই প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে দ্রুতই প্রত্যুত্তর পায় পাকিস্তানি সেনারা। অলির ৫০ গজ দূরে মেশিনগান নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন দু-তিনজন সহযোদ্ধা। তাঁর নির্দেশে তাঁরা পাকিস্তানি বহরের একদম পেছনের গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পাঁচ গজের মধ্যে এলএমজি নিয়ে পজিশনে ছিলেন তাঁর আরেক সহযোদ্ধা। তিনি তাঁকে বলেন জিপ লক্ষ করে গুলি করতে। গজ বিশেক দূরে ছিল মর্টার দল। তারা মাঝের ট্রাক লক্ষ করে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। তিনি নিজে রিকোয়েললেস রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানিদের আঘাত হানেন। আরআরের ছিল মাত্র দুটি গোলা। একটি আমগাছের ডালে লাগায় কোনো ক্ষতি হয়নি পাকিস্তানিদের। দ্বিতীয়টি সরাসরি আঘাত হানে ট্রাকে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকে থাকা পাকিস্তানি সেনারা রাস্তার ওপর লাফিয়ে পড়তে শুরু করে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছোটাছুটি করতে থাকে এদিক-সেদিক। এ সময় অলি আহমদের নির্দেশে গর্জে ওঠে মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্র। পাকিস্তানিরা ভাবেইনি যে মিরসরাইয়ে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত অবস্থান। রাস্তার দুই ধার ছিল উন্মুক্ত। তারা পালাতেও পারেনি। বেশির ভাগ মারা পড়ে বা আহত হয়। খবর পেয়ে আরও পাকিস্তানি সেনা সেখানে আসে এবং যুদ্ধ যোগ দেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। অলি আহমদ অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে সামান্য অস্ত্র এবং সহযোদ্ধা নিয়ে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করেন।

সেনাবাহিনীতে কর্মজীবন[]

রাজনীতি[]

জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলে তিনি সেনাবাহিনীতে তার চাকুরী ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দান করেন। তখন তার আরো ৯ বছর চাকুরী ছিল। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী হন। যমুনা সেতুর কাজ তার সময়েই শুরু হয়। দীর্ঘকাল বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পর ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এ.কিউ,এম, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন। সম্প্রতি এলডিপি নেতৃবৃন্দ তাদের পূর্বের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ত্বাধীন চোদ্দ দলীয় ঐক্য জোটের সাথে একত্রে আন্দোলন ও নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। অতি সম্প্রতি তিনি এ.কিউ,এম, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে মতবিরধের পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।

তথ্যসূত্র[]

বহি:সংযোগ[]

Template:বাংলাদেশের বীর বিক্রম

বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:বীর বিক্রম বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়শ্রেণী:চট্টগ্রামের বিপ্লবী ও রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা

Advertisement